Back to the Hill ~পাহাড়ে ফিরে চলো

M.N LARMA,MITHUN CHAKMA LIVES,THE BATTLE CONTINUES...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

পন্ডিত শিয়ালের পাঠশালা ও ক্যান্টনমেন্টে শিক্ষা: সমাচার পর্ব-১

0 comments
                                 



চলুন,একটা পরিচিত গল্প শুরু করা যাক।পন্ডিত শিয়াল ও এক বোকা কুমিরের গল্প।

অনেক দিন আগে এক বনে পন্ডিত শেয়াল ও বনের পাশের নদীতে এক কুমির থাকত।তাঁরা অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল।কিন্তু  তাঁদের মধ্যে অনেক প্রতিযোগিতা হত।বোকা কুমির কিছুতেই তাঁর চালাক,চতুর বন্ধু শেয়ালের সাথে পেরে উঠত না।পন্ডিত শিয়ালের বনে একটা পাঠশালা ছিল।


একদিন হঠাৎ কুমিরের মাথায় বুদ্ধি এল,আচ্ছা আমার বাচ্চাদের ব›ধু শেয়ালের পাঠশালায় পাঠালে কেমন হয়?যাতে আমার বাচ্চারা জ্ঞান-বুদ্ধিতে শেয়ালের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে।
তো একদিন কুমির তাঁর সাতটা বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে শেয়ালের কাছে গেল। বন্ধু শেয়াল বোকা কুমিরের প্রস্তাব শুনে মহাখুশি হল।কুমির তাঁর বাচ্চাদের সাথে রোজ দেখা করার শর্তে শেয়ালের কাছে রেখে আসল।

এদিকে ধূর্ত শিয়াল মনের আনন্দে প্রথম দিন একটা কুমিরের বাচ্চাকে খেয়ে ফেলল।পরেরদিন কুমির তাঁর বাচ্চাদের দেখতে আসল।চালাক শিয়াল পাঠশালার বাইরে পরপর একটা করে বাচ্চা নিয়ে এসে দেখাল।বোকা কুমির দেখলেন যে তাঁর বাচ্চারা নিরাপদে আছে এবং সে ফিরে গেল।

এভাবে পন্ডিত শেয়াল মনের সুখে প্রতিদিন একটা করে কুমিরের ছানা খেতে লাগল।খাওয়া শেষ হওয়া মাত্র ধূর্ত শিয়াল আরেকটা জঙ্গলে পালিয়ে গেল।কুমির এসে শিয়ালের কূটবুদ্ধি ও বিশ্বাসঘাতকতায়  হা-হুতাশ করতে লাগল।

পাঠক,এবার পাহাড়ে আর্মিদের পাঠশালার দিকে থাকান।এখানে পন্ডিত শেয়াল হচ্ছে আর্মিরা আর বোকা কুমির হচ্ছে পাহাড়িরা।বোকা কুমিরের সন্তান হচ্ছি আমরা।
মা বাবা রোজ আমাদের আর্মিদের স্কুল-কলেজে পাঠাচ্ছেন।সেখানে আমরা কেন যাচ্ছি,কি শিখছি,কিভাবে বেড়ে উঠছি?আমরা নিজেরাও জানি না।আর্মিদের পাঠশালা থেকে আমি,মা-বাবা,সমাজ,জাতি কতটুকু উপকৃত হচ্ছে? পাঠক আজ মূল্যায়নের সময় এসেছে।

আরেকটা পরিচিত গল্প বলি,
অনেক আগে সাহেবদের দেশ(ইংল্যান্ড) থেকে লর্ড ম্যাকলে নামে এক ভদ্রলোক আমাদের দেশে(ভারত) এলেন।ম্যাকলে সাহেব ভারতবর্ষের যেদিকে যান শুধু কাঁদা,পানি,গরু-মহিষ ছাগলের গন্ধ ও দুগর্ন্ধ পান।এবং আমাদের দেশের পুরনো ধর্ম,জ্ঞান,পুরনো গ্রন্থ,সংস্কৃতি,মানুষের জীবন যাপন তাঁর কিছু সহ্য হত না।এদেশের সবকিছুকে তিনি অবজ্ঞা,অবহেলা,ঘৃণার চোখে দেখতেন।
ইংরেজরা এই ভদ্রলোককে দিয়ে অসভ্য,অমানুষের(ইংরেজদের মতে) ভিড় থেকে এদেশের কিছু মানুষকে সভ্য,মানুষ বানানোর কারখানা তৈরি করল।
ইংরেজরা কারখানা থেকে এমন মানুষরূপী পণ্য বের করল যারাঁ দেখতে ভারতীয়দের মতন কিন্তু চাল চলন,কথা বার্তায়,রুচিবোধে সর্ম্পূন তাদেঁর মতন।

তখন থেকে ভারতীয় সমাজে আধাআধি,মেরুদন্ডহীন,বিবেকহীন এক শ্রেণির নিষ্কৃষ্ঠ মানুষ তৈরি হল।তাঁরা ইংরেজদের গোলাম হয়ে স¦দেশের মানুষকে ঘৃণা করতে শুরু করল এবং দেশের মানুষকে শোষণ করতে লাগল।এবং পরবতীর্তে এরাই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিরোধিতা করল।
বর্তমানে তাঁদের একটি অংশকে আমরা চিনি “অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান” হিসেবে।


কলেজে পড়াকালীন একটা কোরিয়ান মুভি দেখেছিলাম।অবশ্য মুভিটার নাম মনে নেই।
মুভির শুরুর দিকে  জাপানীজরা কোরিয়া দখল করতে যায়।জাপান তখন অনেক শক্তিশালী দেশ।তাঁরা একের পর এক দেশ দখল করে উপনিবেশ তৈরি করছে।যেখানে যাচ্ছে সেখানে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে প্রভাবশালীদের নিজেদের দিকে টানছে,জাপানীজ শিক্ষা-দীক্ষা দিচ্ছে।সেখানে জাপানীজ কমান্ডাররা স্থানীয়দের অস্ত্র-শস্ত্রে প্রশিক্ষিত করছে এবং ডকট্রনাইজ করছে।মুভির শেষ দিকে দেখা গেল জাপানীজ সৈন্যদের আর সরাসরি যুদ্ধ করতে হচ্ছে না,যুদ্ধ হচ্ছে কোরিয়ান-কোরিয়ানদের মধ্যে।


গত বছরের শেষদিকে ম্যাকিয়াভেলীর দি ‘প্রিন্স’ বইটি পড়েছিলাম।তিনি তো খুবই চমৎকার ও বুদ্ধিমান লেখক।তিনি ম্যাসিডোনিয়ার রাজা লরেনজোকে লিখছেন-

প্রভু,আপনি রাজ্যে জয় করার পর কিভাবে শাসন করবেন?বিশেষ করে যেসব রাজ্য জনগণ নিজস্ব শক্তিশালী সংস্কৃতি-সভ্যতা গড়ে তুলেছে?

উত্তর দিচ্ছেন ম্যাকিয়াভেলী নিজেই-

প্রভু,আপনি তিন উপায়ে জয়ী রাজ্য শাসন করতে পারবেন-

১.যদি আপনি বিজিত রাজ্যের সবকিছু ধ্বংস করে দেন।
২.যদি আপনি সেখানে গিয়ে বসবাস করেন।
৩.যদি নির্দিষ্ট শর্তে আপনার অনুগত কিছু লোকদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেন।

সুপ্রিয় পাঠক,আমরা এবার নিজেদের দিকে থাকাই,পাহাড়ের দিকে থাকাই।
সরকার  এবং সেনাবাহিনী কি উপায়ে,কোন পদ্ধতিতে আমাদের শাসন করছে।সবচেয়ে বড় কথা হল তাঁরা কোন দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে।একটু গভীরে গিয়ে বললে তাঁরা আসলে আমাদের কি শিক্ষা দিচ্ছে?

পাঠক আপনারা জানেন,
সরকার শুধু সৈন্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয় না,একই সাথে ডকট্রনাইজ ও করে।অর্থাৎ  মস্তিষ্কও সশস্ত্র করে তোলে।।না হলে একজন সৈন্য যুদ্ধ করার সাহস-মনোবল কোথায় পাবে?
আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ও আর্মিদের পাঠশালায় এভাবে ডকট্রনাইজ করা হচ্ছে।
তাঁরা পাঠশালায়,ছাত্রাবাসে নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারছে না,লিখতে পারছে নাা.চর্চা করতে পারছে না,স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ তাকেঁ দেয়া হচ্ছে না। প্রতিদিন তাঁদের কোমল মস্তিষ্কে  উপজাতি,নৃগোষ্ঠী,অসভ্য,বুনো এসব শব্দ সেট করা হচ্ছে।

এভাবে তাঁরা নিজেকে ঘৃণা করতে শুরু করে, বাবা-মাকে ঘৃণা করতে শুরু করে।তাকেঁ পদ্ধতিগতভাবে ঘৃণা ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।সে নিজের জাতির ইতিহাস,সংস্কৃতি,রুচিবোধ  সর্ম্পকে অজ্ঞাত থাকে।তাঁর মধ্যে প্রতিবাদী সত্তার বিকাশ হয় না।




তাঁর কমিউনিটির উপর ঘটে যাওয়া অন্যায়,অত্যাচার,নিপীড়নকে সে বৈধতা দিতে শেখে।বাইরের ঘটনার প্রতি সে উদাসীন হয়ে পড়ে।তাকেঁ এমন পরিবেশে বড় করা হয় সে নিজে ও জানে না তাঁকে কি করতে হবে,কেন করতে হবে,কিভাবে করতে হবে।তাঁর মানসিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো আর স্বাভাবিক বিকাশ হয় না।তাকেঁ সভ্য,সুশৃঙ্খল,মানুষ করার বদলে মানসিক বিকলাঙ্গ প্রাণী বানানো হয়।

পাঠক খেয়াল করুন,আমাদের সমাজে উঠতি মধ্যবিত্ত সন্তানদের আর্মিদের পাঠশালায় পাঠানোর প্রবণতা বেশি।অবাক করার বিষয় হচ্ছে,আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক নেতাও তাঁদের সন্তানদের এসব পাঠশালায় ভর্তি করাচ্ছে। এই নব্য মধ্যবিত্তরা বেশিরভাগ সরকারি-বেসরকারি চাকরি,এনজিও কিংবা ব্যবসা করেন।তাঁদের আয়ের অর্ধেক অংশ সন্তানদের পড়াশোনায় চলে যায়।উচ্চ টিউশন ফি,প্রাইভেট-কোচিং,শিক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের ব্যয়বহুলতা সত্ত্বে ও তাঁরা সন্তানদের এসব স্কুলে পাঠাচ্ছেন।তাঁরা সন্তানদের মানুষ বানাতে গিয়ে কি মানুষরূপী পশু তৈরি করছে আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের যে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা হচ্ছে সেটা কি তারাঁ অনুভব করে? এবং সন্তানরা যে নিজ,নিজের পরিবার,সমাজ,জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে এ দায়িত্ব কি অভিভাবকরা নেবে?
খাগড়াছড়ির ক্যান্টনমেন্টের গেইটের পাশের দোকানগুলো থেকে যে পরিমাণ পাহাড়ি ছাত্র-যুবকদের গাজা,ইয়াবা,মদ সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে তাঁর যে ক্ষতিকর প্রভাব তাঁর দায়িত্ব সরকার,সেনাবাহিনী তো নিচ্ছে না।




শেষকথা,আমরা কি রকম সমাজ চাই সেটা নিধারর্ণ করার দায়িত্ব নিশ্চয়ই আমাদের।জনগনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনগনকে নির্মান করতে হবে।বিকলাঙ্গ প্রজন্ম তৈরির ষড়যনত্র প্রতিহত করতে হলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জণ করতে হবে।নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আজ বোঝা জরুরি,পন্ডিত শেয়ালের উপর বেশি আস্থা,বিশ্বাস রাখলে বোকা কুমিরের মতন অবস্থা হবে।