ছবি:ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
আজ মহালছড়িতে সেনা-সেটেলার হামলার ১৭ বছর।২০০৩ সালরে ২৬ আগস্ট মহালছড়ি উপজেলায় সেনাবাহিনী-সেটেলার বাঙালি যৌথভাবে জুম্মদরে উপর এ হামলা চালায়।নৃশংস এ হামলার ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার হামলার সাথে জড়িত সেনা-সেটলারদের আজো বিচার করেনি।
মহালছড়ির জুম্ম অধ্যুষিত ৫ টি মৌজার ১৪ টি গ্রামের ৩৫০টি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়।এতে ২ জন জুম্ম(এক শিশু) নিহত,প্রায় শতাধিক আহত এবং ১০ জন জুম্ম নারীকে র্ধষণ করা হয়।এক হিসাবে,জুম্মদের প্রায় ৩০ লাখ টাকার সম্পত্তি,মালামাল লু›ঠন ও ধ্বংস করা হয়।
হামলায় যাঁরা নেতৃত্ব দেনঃ
০১.মহালছড়ি জোনের ২১ ইবিআর সদস্যরা;
০২.মি.আবুল কালাম আজাদ;
০৩.জহিরুল ইসলাম;
০৪.নুরুল ইসলাম;
০৫.মো.আব্দুর রশিদ;
০৬.মো.জামাল উদ্দীন;
০৭.অজিত কান্তি দাশ;
০৮.রতন কুমার শীল;
০৯.জসিম উদ্দীন;
১০.ডা.প্রদীপ কুমার চৌধুরী;
১১.তাপস বড়ুৃয়াসহ অনেকে..
যাঁরা হামলায় প্রত্যক্ষ মদদ দেয়-
১.মি.ওয়াদুদ ভূইয়া,২৯৮ নং আসনের সংসদ সদস্য,বিএনপি নেতা,সেটেলারদের সর্দার;
২.মি.হুমায়ন কবির খান,জেলা প্রশাসক,খাগড়াছড়ি;
৩.মি.মতিউর রহমান শেখ,পুলিশ সুপার,খাগড়াছড়ি।
হামলার প্রেক্ষাপট:
২০০৩ সালরে ২৪ আগস্ট সেনাবাহিনীর র্সোস রূপন মহাজন(৩০)পিতা : বিজয় মহাজন নামক এক ব্যবসায়ী সিঙ্গিনালা ফুটবল মাঠ থকেে অপহৃত হয়। সেনা-সেটলারদের অভিযোগ ইউপিডিএফরা তাঁকে অপহরণ করে।এ ঘটনার জের ধরেই সেনা-সেটেলার-বিএনপি-জামাত শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা একযোগে মহালছড়ি উপজেলায় জুম্ম গ্রামে হামলার পরিকল্পনা করে।সেদিন বিকেল ৪ টার দকিে সেটেলার বাঙালিরা খাগড়াছড়ি -মহালছড়ি সড়ক অবরোধে ঘোষণা কর।বাঙালি সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে মহালছড়ি বাজারে সেটেলার বাঙালিরা এক জঙ্গি মিছিল বের করে এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক স্লোগান দেয়। তাঁরা বলে যে- প্রশাসন আমাদের পক্ষে, আর্মিরা আমাদের পক্ষে, থানা আমাদের পক্ষে তাহলে কিসের ভয়! আগামীকাল সকালের মধ্যে অপহৃতকে ছেড়ে দেয়া না হলে আমরা জ্বালাও পোড়াও শুরু করে দেবো।
সেদিন সিন্দুকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সুইনুপ্রু চোধুরী মারমা অপহরণ ও অবরোধ সর্ম্পকে জানার জন্য বাজারে গেলে সেটেলার বাঙালরিা তাকে একটি দোকান ঘরে সারারাত আটকে রেখে নিযার্তন করে পরদিন ছেড়ে দেয়।তাঁর মোটর সাইকেলটি ভাঙচুর করা হয়।
২৬ আগস্ট(ঘটনার দিন) ঃ
দিনটি ছিল মঙ্গলবার, হাটবাজারের দিন। জুম্মরা বাজারে যেতে চাইলে সেটেলার বাঙালরিা বাজারে ঢুকতে বাঁধা দয়ে। পরে জুম্মরা বাবুপাড়া সংলগ্ন রাস্তার পাশে বাজার বসায়। সেখানে ও এসে সেটেলার বাঙালিরা বাঁধা দেয় ও দোকানগুলো ভাঙচুর করে চলে যায়। পরে সকাল প্রায় সাড়ে ৯ টায় সেটেলার বাঙালিরা মিছিল নিয়ে বাবুপাড়া গ্রামে হামলা শুরু করে।ঘটনার সময় ২১ ইবি আর সেনা সদস্যরা বোটযোগে সেটেলার বাঙালিদের পেট্রোল ও কেরোসিন সরবরাহ করে।
ঘটনার দিন বিকেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য,সেটেলার সর্দার ওয়াদুদ ভূইয়া,খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক হুমায়ন কবির খান ও পুলিশ সুপার মতিউর রহমান শেখ মহালছড়িতে যান।তাঁরা খাগড়াছড়ি থেকে মহালছড়ি নিরাপদে যাওয়া পর্যনÍ সেনাÑসেটলাররা হামলা বন্ধ রাখে।তারাঁ মহালছড়িতে পৌছাঁমাত্র সেটেলাররা মাইসছড়ির নোয়াপাড়া,লেমুছড়িতে হামলা করে।জানা যায়, মহালছড়ি যাওয়ার পথে সেটেলার নেতা ওয়াদুদ ভূইয়া মাইসছড়ি বাজারে গোপনে স্থানীয় সেটেলারদের সঙ্গে মিটিঙ করেন এবং জুম্মদের গ্রামে হামলার নির্দেশ দেন।
ছবি:ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
যেসব জুম্ম গ্রামে হামলা চালানো হয়-
১. বাবুপাড়া
২. স-মিল পাড়া
৩.মধ্যম পাহাড় তলী
৪. কেরেঙ্গেনাল
৫.বসন্ত বৈদ্য পাড়া
৬. দুরপয্যানাল
৭. রামেসু কার্বারী পাড়া
৮. লেমুছড়ি
৯. নোয়াপাড়া
১০. ভূয়টেক
১১. থলীপাড়া
১২. চংড়াছড়ি মুখ পাড়া
১৩. হাসপাতাল ও টিন্ডটি এলাকা
১৪. হেমন্তপাড়া।
যেসব মন্দির,স্কুল পুড়িয়ে দেওয়া হয়-
১.লেমুছড়ি ত্রিরত্ন বৌদ্ধ বিহার,লেমুছড়ি।ঘটনার দিন বাঙালি সেটেলারা ১০ ফুট উঁচু বৌদ্ধ র্মূতি ধ্বংস করে,৪টি ধাতুর তৈরি বৌদ্ধ র্মূতি লুট করে নিয়ে যায় এবং মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দেয়। র্ধমীয় গুরু র্ধম জ্যোতি ভিক্ষু কোনোরকম পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
২.বাবু পাড়া অম্র কানন বৗেদ্ধ বিহার,বাবুপাড়া।সেনাবাহিনী জোরর্পূবক বাহিরে ঢুকে ভাঙচুর চালায় এবং পাঁচশ থাকার ১০ টি নোট লুট করে।
৩.পাহাড়তলি শান্তি নিকেতন বৌদ্ধ বিহার।সেটেলার বাঙালিরা মন্দিরে জোরর্পূবক ঢুকে লুটপাট চালায়।
৪.কেরেঙেনাল জ্ঞানোদয় বৌদ্ধ বিহার।
৫.লেমুছড়ি গ্রামে ইউনিসেফ স্কুল।
হামলায় যাঁরা নিহত হয়-
১.মি. বিনোদ বিহারী খীসা(৫৭),বাবুপাড়া গ্রামের সুরেন্দ্র লাল খীসার পুত্র।ঘটনার দিন সকালে বাবুপাড়া সুইচ গেটের পাশে দোকানে সৈন্যরা তাঁকে আটকিয়ে বেয়নেট র্চাজ কর।এরপর সেনারা তাঁকে সেটেলারদের হাতে তুলে দেয় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে হত্যা করে।
২.বাবু চিজিক্কো চাকমা(৮ মাস),পাহাড়তলি গ্রামের সমীরণ চাকমার কন্যা।সেটেলার বাঙালিরা তাঁকে গাছে ঝুলিয়ে নির্দয়ভাবে হত্যা করে।
এছাড়া হামলায় ৯জন গুরুত্বর এবং শতাধিক আহত হয়।