সরকার
২৫ জুন ১৯৮৯ সালের পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে
বহিরাগত
সেটেলার বাঙালিদের আইনগত বৈধতা দেয়।জুম্ম জনগণ এ নির্বাচন বর্জন করে।
লংগদু
গণহত্যার প্রেক্ষাপট:
০৪মে
১৯৮৯,সবহিরাগত সেটলার সর্দার আব্দুর রশীদ সরকার অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের হাতে খুন হন।বলা হয় আসন্ন ২৫ জুন ১৯৮৯ লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব করতে বিদ্রোহী প্রার্থী সেটলারদের অর্ন্তকোন্দলে তাঁকে খুন করা হয়।কিন্তু কোনো তদন্ত,বিচার ছাড়াই শান্তিবাহিনীর উপর দোষ চাপানো হয়।সরকার এই হত্যাকান্ডকে সাম্প্রদায়িক রূপ দি তে মরীয়া হয়।
তকালীন মাইনী মুখ জোনের ১৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জাকির হোসেন স্থানীয় ভিডিপি(গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী) ও মুসলিম সেটেলারদের নির্দেশ দেন জুম্ম অধ্যুষিত গ্রামে হামলা করার।
সেটলারদের যাঁরা নেতৃত্ব দেন-
১.ইউসুফ আলী,ইসলামাবাদ গ্রাম,সনে এলাকা,লংগদু
উপজেলা;
২.রুহুল আমীন,মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য,সনে এলাকা,লংগদু উপজেলা;
৩.নুরুল ইসলাম তালুকদার,সনে এলাকা,লংগদু উপজেলা;
৪.সিরাজ,চেয়ারম্যান,আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদ,লংগদু উপজেলা;
গণহত্যা
মেজর
জাকিরের নির্দেশ অনুসারে স্থানীয় ভিডিপি,সুসলিম সেটলাররা সন্ধ্যা ৬:১৫ দিকে আক্রমণ শুরু করে।এ গণহত্যা ০৬ মে,১৯৮৯ পর্যন্ত চলে।
যেসব
গ্রামে আক্রমণ চলে-
১.তিনটিলা
২.মানিক্কিজোড় পাড়া
৩.বাত্যা পাড়া
৪.লংগদুর
বড়াদাম
৫.মাজন পাড়া
৬.সনে
৭.বামে আটারকছড়া
৮.ডানে আটারকছড়া
৯.করল্যাছড়ি
মুসলিম
সেটেলাররা
মূল্যবান
জিনিসপত্র
লুঠ করে,ঘর পুড়িয়ে দেয়,স্কুলে আগুন ধরিয়ে দেয়,বুদ্ধ মূর্তি ও মন্দির ধ্বংস করে,শিশু ও নারীদের ধর্ষণ করে এবং অসংখ্য লোককে হত্যা করে যাদেঁর অধিকাংশই ছিল বৃদ্ধ,শিশু ও নারী।
কমপক্ষে
৫০ জন জুম্মকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।তাঁদের মধ্যে পুরুষ ২১ জন,নারী ২০ জনএবং শিশু ০৯ জন(২ জন বাচ্চা)।গুরুতর আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ১৮ জন।তাঁদের মধ্যে পুরুষ ০৬ জন,নারী ০৬ জন,শিশু ০৬ জন(০১ জন বাচ্চা)।প্রকৃত ভিক্টিমের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
ঘটনার
পূর্ণ তথ্যে উঠে আসেনি কারণ স্থানীয় এলাকা অবরুদ্ধ ছিল এবংযেকোনো ধরনের আন্দোলন নিষিদ্ধ ছিল।অন্যদিকে পুরোপুরি এটা জানা ও সম্ভব ছিল না কতজনকে হত্যা করা
হয়েছে
কারণ সেনা-সেটলাররা
লাশ
গায়েব করেছিল।
সম্ভবত
লংগদু গণহত্যায় সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা হয়েছিল তিনটিলা গ্রামের মি.অনিল বিকাশ চাকমার বাড়িতে।তিনি
ইউপি‘র সাবেক চেয়ারম্যান এবং সরকার সমর্থিত ট্রাইভেল কনভেনশনের সহসভাপতি,আরেকদিকে ৫নং লংগদু মৌজার
হেডম্যান।মি.
এ বি চাকমা সরকারের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক এবং সরকারের পক্ষে দাসের মত অনুগত হয়ে কাজ করতেন।
কিন্তু
সরকার ও সেনা কতৃপক্ষ তাঁর পরিবারের সদস্যদের জগণ্যভাবে হত্যা করে এবং তাঁর ঘরকে নরকে পরিণত করে।কাকতালীয়ভাবে মি. এ বি চাকমা সেদিন ঘরে ছিলেন না,যখন আক্রমণ শুরু হয় তাঁ স্ত্রী পালাতে পারে নি।তাঁকে প্রথম গুলি করা হয় এবং পরে সেটলার এসে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।তাঁর মতন অনেক প্রতিবেশী তাঁদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন,তারাঁ অনেকেই নিহত এবং গুরুতর আহত হয়।
উদাহারণ-মি.মুরতি মোহন চাকমা,লংগদুর সরকারি পরিবার পরিকল্পনা অফিসের একজন কেরাণি,ত্ঁকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং শরীর কেটে টুকরো টুকরো করা হয়।
তাঁর
পুত্র –সজল চাকমা(৯) বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয় এবং আগুনে ছুঁড়ে দেওয়া হয়।
জাগরণ
চাকমা(১১) তিনটিলা গ্রামের বিজয়শীলের পুত্র,তাঁকে গলায় বেয়নেট বসিয়ে দেয়,পরে শরীর কেটে টুকরো টুকরো করে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
মি.ক্যয়া মং মারমা(৫৫),কক্সবাজারের হার্বাঙ এলাকার মি. হ্লা সাথোয়াই মারমার পুত্রমি.রাঙা মং মারমা,লংগদুতে ব্যবসা করতেন।তাঁরা করল্যাছড়ি বাজার থেকে ফিরছিলেন।ফেরার পথে সেটলাররা তাঁদের আটকায় এবং হত্যা করে।
জুম্মদের ঘর,স্কুল ও মন্দিরের পুড়িযে দেওয়ার সংখ্যা:
১.ঘর ৬৬৩ টি
২.রান্না ঘর-২৪৬টি
৩.ধানের গোলা ঘর-১০২টি
৪.সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,সনে এলাকা,রাঙামাটি
৫.লংগদু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,বড়াদাম গ্রাম,লংগদু
৬.তিনটিলা বন বিহার,সেটলাররা ৭ লক্ষ থাকার মালামাল লুট করে এবং বুদ্ধ মুর্তি(থাইল্যান্ড সরকার এটি দিয়েছিল যা থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়েছিল) ধ্বংস করে।
৭.মনোরমা বৌদ্ধ বিহার,আটারকছড়া গ্রাম,বাঙালি সেটলার দ্বারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৮০,০০০ টাকা।
৮.দশবল ধর্ম রত্ন বৌদ্ধ
বিহার,সনে এলাকা,সেটেলাররা একটি পিতলের নির্মিত বুদ্ধ মূর্তি,হাতির দন্তে তৈরি ২টি বুদ্ধ মূর্তি লুট করে।পরে মন্দিরটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ৬০,০০০ টাকার সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতি হয়।
৯.সনে বৌদ্ধ বিহার,সেটলাররা একটি পিতলের মূর্তি লুঠ
করে এবং বিহারটি পুড়িয়ে দেয়।এতে প্রায় ৬০,০০০ টাকার
ক্ষয়ক্ষতি হয়।
১০.করল্যাছড়ি বৌদ্ধ বিহার,করল্যাছড়ি,মুসলিম সেটেলাররা ৩টি পিতলের বুদ্ধ মূর্তি
লুট করে,এরপর পুড়িয়ে দেয় এবং প্রায় ৫০,০০০
টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
১১.বড়াদাম বৌদ্ধ বিহার,বড়াদামে
সেটলাররা বৌদ্ধ বিহারে আগুন লাগায়
এবং ৩টি পিতলের মূর্তি লুট করে নিয়ে যায়।এতে প্রায়
৯০,০০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদ-
জুম্ম জনগন এ হত্যাকান্ডের বিরুদ্দে ব্যাপক প্রতিরোধ করে।বাংলাদেশ
সরকার ঠান্ডা মাথায় অসহায় জুম্মদের উপর লংগদু হত্যাকান্ড ঘটায়।
১.চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় এবং অনেক পরিচিত নেতা এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে
১০ মে ১৯৮৯ এ রাঙামাটি ডেপুটি কমিশনারকে স্মারকলিপি প্রদান করে।
২.০৭মে ১৯৮৯ লংগদুর জুম্ম জনগণ এ গণহত্যার প্রতিবাদে
বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
৩.২১ মে ১৯৮৯ এ জুম্ম ছাত্ররা ও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা
হত্যাকান্ডেরে প্রতিবাদে মিছিল বের করে স্মরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
৪.৩০মে ১৯৮৯,বিমল বংশ মহাথেরো(পার্বত্য বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের সভাপতি) এবং ধর্মলংকার ভিক্ষু(পা.বৌ.ভি.সংঘের সচিব) হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে এবং বৌদ্ধ বিহার
ধ্বংস ও অপবিত্র করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়াঃ
বাংলাদেশ সরকার লংগদু গণহত্যায় জড়িত সেটেলার বাঙালি ও সেনাবাহিনীর
বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।অন্যদিকে লংগদু গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংঘটিত করার কারণে
রাজা দেবাশীষ রায়কে ১১-১৪ মে ১৯৮৯ গৃহবন্দী করা হয়।এবং মিডিয়াকে
লংগদু গণহত্যা ও জুম্ম ছাত্র-বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ প্রকাশ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
০৫মে ১৯৮৯,মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম(জিওসি,চট্টগ্রাম ডিভিশন),ব্রিগেডিয়ার
সাফাত(২৪ ইনফেনট্রি ডিভিশন,রাঙামাটি)
এবং কয়েকজন পাহাড়ি নেতা গৌতম কুমার দেওয়ানসহ (রাঙামাটি
উপজেলা চেয়ারম্যান) তিনটিলা গ্রামে পরিদর্শনে যাস এবং সেখানে
মিটিঙ হয়।
মিটিঙ এ মি.দেওয়ান সেটেলার বাঙালিদের জিজ্ঞেস করেন কেন তারাঁ
লংগদু এলাকায় পাহাড়িদের উপর হত্যাকান্ড চালিয়েছিল।জবাবে
একজন সেটেলার নেতা বলেন সরকারের নির্দেশ এবং নির্দেশনা ছাড়া এ হত্যাকান্ড হত না।তৎক্ষনাৎ
ব্রিগেডিয়ার সাফাত মি. দেওয়ানের হাত থেকে মাইক কেড়ে নেন এবং এ ধরনের
কিছু বলতে বন্ধ করতে বলেন।
সম্ভবত এটা গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত ছিল যে আব্দুস সালাম যখন লংগদু
এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন,এর পরবর্তীতে ০৬মে ১৯৮৯ সালে সেটলাররা আবারো জুম্মদের সুগুরিপাদা গ্রাম
আক্রমণ করে।লঙগদু গণহত্যার ফলে অধিকাংশ জুম্ম পার্শবর্তী জঙ্গলে পালিয়ে যায় এবং
অনেকে মিজোরামে প্রবেশ করে।
এর মধ্যে সরকার জুম্মদের জায়গায় সেটেলার বাঙালি পূর্ণবাসন করে।
লংগদু গণহত্যায় যাঁরা হত্যাকান্ডের শিকার হয়-
১.মিসেস অমিতা চাকমা(৪০),মি.অনিল বিহারী চাকমার স্ত্রী।লংগদু ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান,সহ-সভাপতি হিল ট্রাক্টস ট্রাইভেল কনভেনশন,এবং ৩ নং লংগদু মৌজার হেডম্যান।মিস.অনিতাকে রাইফেল দিয়ে প্রথমে গুলি করা হয়।সে গুরুত¦র আহত হয়েছিল।পরে সেটলাররা তাঁকে বর্শা ও কোঁচ দিয়ে হত্যা করে।
২.মিসেস কেংগারি চাকমা(৩২),মি. চিত্তরঞ্জন চাকমার স্ত্রী,তিনটিলা গ্রামের বাসিন্দা,সেটলাররা ঘরে আগুন লাগায় এবং চাপাতি দিয়ে হত্যা করে।
৩.মি.জগত বসু চাকমা(৩২),তিনটিলা গ্রামের মি, চিত্তরঞ্জন চাকমার পুত্র।মি.জগত বসু বন্দুকের গুলিতে গুরুত্বর আহত হন।সেটেলাররা ধারালো অসত্র দিয়ে তাঁকে হত্যা করে।
৪.মিসেস কালিন্দী চাকমা(২৮),তিনটিলা গ্রামের মি.জগত জ্যোতি চাকমার স্ত্রী,সেটেলার বাঙালিরা তাঁকে গণধর্ষণ করে এবং তাঁর ভাগিনাকে ছুরিকাঘাত করে।সে ঘটনাস্থলে মারা যায়।
৫.মিস.মঙ্গোলি চাকমা(১,১/২ মাস),তিনটিলা গ্রামের মি. জগতজ্যোতি চাকমার কন্যা।সেটেলার বাঙালিরা তাকেঁ মায়ের কোল থেকে কেড়ে নেয় এবং সাথে সাথে মাটিতে আছাড় মেরে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
৬.বাবু রুবেন্টু বিকাশ চাকমা(১১),তিনটিলা গ্রামের মি. সুুভাষ বসুর পুত্র।রুবেন্টুকে বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল এবং বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়।
৭.বাবু সমরেন্টু বিকাশ চাকমা(৭), তিনটিলা গ্রামের মি. সুুভাষ বসুর পুত্র।সমরেন্টুর ও তাঁর ভাই রুবেন্টুর মত দুর্ভাগ্য হয়েছিল।কিন্তু খুবই বিয়োগান্তক এবং ভয়ংকর পরিণতি হয়েছিল রুবেন্টুর।সেটেলার বাঙালিরা প্রথমে তাঁর হাত কেটে দেয়,এরপর পা কেটে ঘরের জ¦লন্ত আগুনে ফেলে দেয়।
৮.মিসেস জগত দেবী চাকমা(২২),তিনটিলা গ্রামের মি.চিত্তরঞ্জন চাকমার মেয়ে।সেটেলার বাঙালিরা তাঁকে সেনাদের সহযোগিতায় জোর করে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে এবং বর্বরের মতন ঘরের উঠোনে গণধর্ষণ করে।এরপর পেটে ছুরিকাঘাত করা হয এবং তাঁর শরীর কেটে টুকরো টুকরো করা হয়।
৯.বাবু জাঙশন চাকমা(৪ মাস),তিনটিলা গ্রামের মি.মঙ্গল চন্দ্র চাকমার পুত্র।যখন জাঙশনের মা বাচ্চাকে নিয়ে পালাচ্ছিলেন তখন সেটেলাররা তাঁদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বাচ্চাকে তাঁর কোল থেকে কেড়ে নেয়।এরপর সেটেলাররা জংশনকে মাটিয়ে আছাড় দিয়ে নির্দয়ভাবে হত্যা করে।জংশনের মা গুরুত্বর আহত অবস্থায় কোনোরকম পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
১০.মিসেস চারুবালা চাকমা(৫৫),তিনটিলা গ্রামের মি.ডেমহুলো চাকমার সত্রী।যখস সে ঘর থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল তখন সেটলার বাঙালিরা পিছন থেকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে।পরে সে পাশর্^র্বতী জঙ্গলে একটা গাছের নিচে গিয়ে মারা যায়।
১১.মি. মুরতি মোহন চাকমা(৩৮),তিনটিলা গ্রামের হেমচন্দ্র চাকমার পুত্র।তিনি মি.অনিল বিহারী চাকমার(লংগদু এলাকার পরিচিত একজন জুম্ম নেতা) বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।যখন সে সেটলার বাঙালিদের র্ববরোচিত হত্যাকান্ড দেখে তখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে আশ্রয় নেন।কিন্তু সেটলার বাঙালিরা অনিল বিহারী চাকমার বাড়ি ঘিরে ফেলে.দরজাÑজানালা সব ভেঙে ফেলে।সেটলাররা ঘরে ডুকে বন্দুকের গুলি ছোঁড়ে যারা সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল তাঁদের উপর।অনিল বিহারীর বাড়িতে অধিকাংশ জুম্মকে গুলি কওে,ধারালো অস্তর দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।মি. মুরতি তাঁর পুত্রদের নৃশংসভাবে হত্যা করতে দেখেন।
১২.মি.সজল চাকমা(৯),মি.মুরতি মোহন চাকমার পুত্র।সজল তাঁর বাবাকে হত্যা করার র্নিদয়ভাবে হত্যার দৃশ্য দেখেন। সেটেলার বাঙালিরা তাকেঁ বেয়নেট দিয়ে হত্যা করে এবং আগুনে ছুঁড়ে মারে।
১৩.মি.সুষম রঞ্জন চাকমা(৬০),তিনটিলা গ্রামের মি.ধনেশ্বর চাকমার পুত্র।সুষম রঞ্জন চাকমা যখন বাড়ি থেকে পালাচ্ছিলেন তখন তাঁকে গুলি করা হয়।পরে বন্দুকের বেয়নেট দিয়ে র্চাজ করা হয় এবং শরীর কেটে টুকরো টুকরো করা হয়।
১৪.মি.র্সূয মনি চাকমা(৩৮),তিনটিলা গ্রাম।তিনি মি.অনিল বিহারী চাকমার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।সেটলার বাঙালিরা ঘরে ডুকে হত্যাযজ্ঞ চালায়।সেখানে তিনি নিহত হন।
১৫.মি.সৌর্ন্দয চাকমা(৬০),তিনটিলা গ্রামের মি.পালঙগি চাকমার পুত্র।সৌর্ন্দয ভিডিপি’র গুলিতে নিহত হন।তাঁর শরীর জ¦লন্ত আগুনে ছুঁড়ে দেওয়া হয়।
১৬.মি. নবকুমার চাকমা(৪৯),তিনটিলা গ্রামের বাঘানক চাকমার পুত্র।মি.নব কুমারকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করা হয়।পরে সেটলাররা তাঁর শরীর কেটে টুকরো করে।
১৭.মি.ক্যয়মং মারমা(৫০),মাইনী মুখ বাজারের মি.ম্রাসাথোয়াই মারমার পুত্র।সে বাজার থেকে ফিরছিল।সেটেলার বাঙালিরা তাঁেক জোর করে জঙ্গলের ভিতর নিয়ে গিয়ে হাত-পা বাঁধে।এরপর তাঁেক গুলি করা হয় এবং শরীর কেটে ফেলা হয়।
১৮.বাবু চিমং মারমা(৫),মি.ক্যয়মং মারমার পুত্র।সেটেলাররা চাপাতি দিয়ে আঘাত করে এবঙ চিমং এর মাযের কোলে মৃত্যু হয়।
১৯.বাবু শান্তি বিকাশ চাকমা(১৩),তিনটিলা গ্রামের লক্ষীচান চাকমার পুত্র।সেটেলার বাঙালিরা লক্ষীচান চাকমার ঘর ঘিরে ফেলে এবং আগুন লাগায়।এরপর র্নিবিচাওে সেটলাররা পরিবারের সদস্যদের উপর গুলি চালায়।যখন তাঁরা ঘর থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল তখনই শান্তি বিকাশ চাকমা গুলিতে মারা যান।পরেরদিকে সেটলাররা শান্তির শরীর কেটে টুকরো করে।
২০.মি.ঈশ্বর চন্দ্র চাকমা(৪৩),বাত্যা পাঢ়ার মি.কল্প চন্দ্র চাকমার পুত্র।মুসলিম সেটেলাররা তাঁদের ঘর ঘিরে আগুন লাগিয়ে দেয়।পরে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।এবং কেটে টুকরো করা হয়।
২১.বাবু জাগরন চাকমা(২),তিনটিলা গ্রামের বিজয়শীল চাকমার পুত্র।সেটেলার বাঙালিরা ঘরে হামলা চালায় সেখানে যারা আশ্রয় নিয়েছিল তাঁদের উপর।যখন সেটেলাররা পাশের ঘওে হামলা চালাচ্ছিল তখন সে মি.অনিল বিহারী চাকমার ঘরে আশ্রয় নেয়।তাঁর সাথে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ও লোমহর্ষক ঘটনা সেটেলাররা ঘটিয়েছিল।প্রথমে গলায় বেয়নেট ঢুকানো হয় এবং শরীর টুকরো করে কেটে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
২২.মি. জয় কুমার চাকমা(৮০),তিনটিলা গ্রামের মি.ইন্দ্রমনি চাকমার পুত্র।সেটেলার বাঙালিরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।রেয়নেট দিয়ে চার্জ করে এবং পরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
২৩.মিসেস মোনবি চাকমা(৫২),মি.যুবাধর চাকমার সত্রী,মোনবি মি.অনিল বিহারী চাকমার বাড়িতে একই ঘটনার শিকার হয়েছিলেন যেখানে সেটেলাররা আশ্রয় নেয়া জুম্মদের উপর নির্বিচারে হত্যাকান্ড চালায়।
২৪.মি.মিধেহিয়ে চাকমা,করল্যাছড়ি গ্রামের মি. উল্লেয়ে চাকমার পুত্র।সেটেলাররা তাঁর ঘরে আগুন লাগায় এবং যখন সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল তখন তাঁকে গুলি করা হয়।মি.চাকমা গুরুতর আহত হন এবং সেটেলাররা তাঁকে ধরে ফেলে। পরে ধারালো অস্ত্ও দিয়ে তাঁর মরীর কেটে টুকরো করা হয়।
২৫.মি এড়ায়্যা চাকমা,আটারকছড়া গ্রামের মি.চন্দ্র মোহন চাকমার পুত্র।যখন সে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ভিডিপি ও সেটলাররা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।পরে সেটলাররা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীর কেটে টুকরো করে।
২৬.মি.কমল কৃঞ্চ চাকমা(৫৫),এরেঙেছড়ি।মি.চাকমাকে প্রথমে মারধর করা হয়। সেটলাররা তাঁকে টাকা দিতে বাধ্য করে এবং পরে ঘরে আগুন লাগায়।এরপর সেটেলাররা তাঁর গলা কাটে এবং শরীর কেটে টুকরো টুকরো করে।
২৭.মিসেস জয়মুখীমা চাকমা(৭০),মহাজন পাড়া গ্রামের মি.দোলাচান চাকমার স্ত্রী।যখন ঘর থেকে পালাচ্ছিলেন তখন তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
২৮.মিসেস বুড়ি চাকমা(৬৫),সনে গ্রামের মি.কৈলাস চন্দ্র চাকমার স্ত্রী ।সেটেলার বাঙালিরা ত্ঁকে পিছনে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে এবং গুলি করে গুরুত¦র আহত করা হয়।পরে পাশের জঙ্গলে গাছের নিচে গিয়ে সে মারা যায়।
২৯.মিসেস টংলিমা চাকমা(৭০),হৃদয় রঞ্জন কার্বারী পাড়ার মি. গোলক চান চাকমার স্ত্রী।ঘর থেকে পালানোর সময় তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
৩০.মি.বালা চাকমা(৭০),হৃদয় রঞ্জন কার্বারি পাড়া থেকে।সেটেলার বাঙালিরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।এবং পরে ঘরে তাঁর মাথা কর্তন করা হয়।
৩১.মিসেস সুরামুখী চাকমা(৬০), হৃদয় রঞ্জন কার্বারি পাড়া মি.নাচ্যরাম চাকমার সত্রী।মিসেস চাকমা গুরুত্বর জ¦র অবস্থায় ঘরের ভিতর শুয়ে ছিল।যখন সেটলাররা আক্রমণ চালাচ্ছিল তখন পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যেতে পারলে ও তিনি পারেননি।সেটেলাররা ঘরে ডুকে ঘরের সমস্ত কাপড় দিয়ে ডেকে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।তাঁকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।
৩২.মিসেস হেঙউদি চাকমা(৭০),লংগদুর বড়াদাম।সেটেলার প্রথমে ঘরের মূল্যবান জিনিস লুট করে এবং ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়।মিসেস চাকমা বৃদ্ধ হওয়ায় পালিয়ে যেতে পারেননি।সেটেলার ও ভিডিপি ঘরে ডুকে নির্বিচারে গুলি করে।তিনি গুলিতে গুরুত্বর আহত হন এবং সেটেলাররা তাকেঁ হত্যা করে শরীর টুকরো করে।
৩৩.মি.জগেন্দ্র লাল চাকমা(৫০),দিঘীনালার পেঙকাজ্যা গ্রামের মি.পূর্ণ মোহন চাকমার পুত্র।মি.চাকমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় যখন তিনি বাড়ি থেকে পালাচ্ছিলেন।সেটলোর ও ভিডিপি’রা তাঁকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে।
৩৪.মিসেস সন্তোসি চাকমা(৬০),তিনটিলা গ্রাম।সেটেলার বাঙালি ও ভিডিপিরা জোর করে তাঁর ঘর পুড়িয়ে দেয়।সন্তোসি চাকমা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন।তিনি হাটতে পারতেন না।সেটেলার ও ভিডিপিরা তাঁর গলায় বেয়নেট চার্জ করে এবং শরীর কেটে টুকরো টুকরো করে।
৩৫.মিস ভাগ্যদেবী চাকমা(২০),তিনটিলা পাড়া।সেটেলার বাঙালি,ভিডিপি ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাঁকে গণধর্ষণ করে যতক্ষণ না সে জ্ঞান হারায়।পরে সেটলাররা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।
৩৬.মি.কালায় মারমা(৪৫),মি.মারমা লংগদু বাজারের একজন ব্যবসায়ী।তিনি টিনটিলা পাড়ায় থাকতেন।যখন সে বাজার থেকে ফিরছিলেন সেটেলাররা আটকিয়ে গুরুত্বর মারধর করে।সেটেলাররা তাঁর হাত পা বেধেঁ ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।পরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
যাঁরা গুরুত্বর আহত হয়েছিলেন-
১.মিসেস পূর্ণা শোভা চাকমা(২৮),তিনটিলা গ্রামের মি. বিজয় শীল চাকমার স্ত্রী।
২মিস ঝর্ণাদেবী চাকমা(২০).,তিনটিলা গ্রামের মি.লোকজিৎ চাকমার কন্যা।
৩.মিস নকি চাকমা(১),তিনটিলা গ্রামের মি.সুভাষ বসু চাকমার কন্যা।
৪.মিস জলি চাকমা(৪), তিনটিলা গ্রামের মি.জগত বসু চাকমার কন্যা।
৫.মিস পদ্ম লক্ষী চাকমা(২),তিনটিলা গ্রামের মি. জ্ঞান প্রভাত চাকমার কন্যা।
৬.মি.সুধাংশু বিমল চাকমা(৫০),লংগদু বড়াদামের মি. চন্দ্র নাথ চাকমার পুত্র।
৭.মিসেস অমিয়া চাকমা(৪৫), লংগদু বড়াদামের মি.সুধাংশু বিমল চাকমার স্ত্রী।
৮.মি.আনন্দ কুমার চাকমা(৬০),লংগদু বঢ়াদামের বিজেহালা চাকমার পুত্র।
৯.বাবু রিকেন চাকমা(৮),আটারকছড়া গ্রামের মি. দিগবিজয় চাকমার পুত্র।
১০.মি.নবজ্যোতি চাকমা(২৪),হৃদয় রঞ্জন পাড়ার মি.মহেন্দ্র চাকমার পুত্র।
১১.মিসেস রুপালি চাকমা(২৫),তিনটিলা গ্রামের মি.স্নেহ রঞ্জন চাকমার স্ত্রী।
তথ্যসূত্র: http://www.angelfire.com/ab/jumma/massacre/19890504_longadu_massacre.html এ প্রকাশিত লেখার আমার প্রথম বাংলা ভাবানুবাদ।মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বজাতির উপর ঘটে যাওয়া গণহত্যা সম্পর্কে জানা,জানার আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা এবং অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রচেষ্টা থেকে এই অনুবাদ শুরু।।অনুবাদ করার নির্দিষ্ট METHODOLOGY ও এখানে অনুসরণ করা হয়নি।সেজন্য অনেক ভুল-ভ্রান্তি আছে।বাক্য গঠন,সংযোজন,শব্দের ব্যবহার ও ঠিকমত হয়নি।অতীতে এরকম কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই।অনুবাদের সমালোচনা,ভুল-ভ্রান্তি ধরিয়ে দিলে এবং গণহত্যা সর্ম্পকিত নতুন কোনো তথ্য সংযোজন করলে উপকৃত হই।
এই লেখা পড়ে যদি নতুন প্রজন্ম কিছুটা হলেও অতীত জানতে পারে,বুঝতে পারে,উৎসাহিত হয়,দুঃখ পায়,আক্ষেপ করে,দায়িত্ব নিতে শেখে তাহলে শ্রম সার্থক হয়।