Back to the Hill ~পাহাড়ে ফিরে চলো

M.N LARMA,MITHUN CHAKMA LIVES,THE BATTLE CONTINUES...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

শহীদ মিঠুন চাকমা জীবিত মিঠুনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী!

0 comments

                                                                                  ছবি ঃ ইন্টারনেট 


শহীদ মিঠুন চাকমা জীবিত মিঠুনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী!


মিঠুন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়ত জাতিসত্তার রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকার নাম।  তিনি ১৯৭৭ সালে ১৮ই মার্চ খাগড়াছড়ি সদরের গামারিঢালা গ্রামে এক রাজনীতি সচেতন পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম স্বপন কিশোর চাকমা এবং মাতার নাম কর্মোৎপলা খীসা। খুব অল্প বয়সেই তিনি মা বাবাকে হারান। তাঁর বাবাও ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার বঞ্চিত জনগণের একজন মুক্তিকামী সৈনিক।

তিনি ১৯৯৬ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় পাশ করেন। ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ২০০২ সালে কৃতিত্বপূর্ণ রেজাল্ট নিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর সুযোগ এসেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার। কিন্তু আজন্ম প্রতিবাদী মিঠুন চাকমা সেই সুযোগ স্বেচ্ছায় প্রত্যাখান করে, পাহাড়ের নিপীড়িত জাতি ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যুক্ত হন।

তিনি ২০০৩ সালে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। পিসিপি’তে সভাপতির দায়িত্ব দক্ষতা ও সফলতার সাথে শেষ করে তিনি গণতান্ত্রিক যুব ফোরামে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পাহাড়ের নিপীড়িত জাতি ও জনগণের মুক্তিকামী রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ-এ যোগদান করেন। ২০০৭ -০৮ সালে দেশে যখন জরুরী অবস্থা চলমান এবং সেনাবাহিনীর মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল তীব্র আকার ধারণ করে, সেসময় তিনি মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর, লংগদুর মেরুংসহ সাজেকের ঐতিহাসিক ভূমি রক্ষার আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

 তিনি রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিপীড়িত জাতিসমূহের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন-নির্যাতন, ভূমি বেদখল-উচ্ছেদ ও সেনাশাসনের বিরুদ্ধে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। পাহাড়ের জাতিসত্তাসমূহের পাশাপাশি দেশের সমতল অঞ্চলে বসবাসরত জাতিসমূহ তথা বিশ্বে সকল নিপীড়িত জাতি ও জনগণের প্রতি তার ছিল সমান দরদ।

তিনি একটি শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় একজন নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক ছিলেন। সকল কৃষক-শ্রমিকের-মেহনতির জনগণের শৃঙ্খল মুক্তির সংগ্রামে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাথে নিজেকে আমৃত্যু সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। এছাড়াও জাতিসত্তা জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে গঠিত জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের একজন অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজ করেছিলেন।

তিনি একজন সুবক্তাও ছিলেন। তাঁর অনুপ্রেরণামূলক ও জ্বালাময়ী বক্তব্যের মাধ্যমে সকলকে উদ্দীপ্ত করতে পারতেন। চাকচিক্যময় পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেও তিনি সরল জীবন যাপন করতেন। এজন্য তিনি প্রতিবাদী ছাত্র সমাজের অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে উঠেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন ও জাতিগত দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠ মিঠুন চাকমা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চক্ষুশূলে পরিনত হন। তাঁর বিরুদ্ধে দেয়া হয় ঢেড় ডজনেরও অধিক মিথ্যা মামলা। ২০০৪ ও ২০১৬ সালে দুই দফা  রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক আটকের শিকার হন। ২০০৪ সালে খাগড়াছড়ির স্বনির্ভরের সমাবেশ থেকে তুলে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। এসময় তার উপর চালানো হয় অমানুষিক শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। ২০১৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম তাকে আইসিটি মামলায় গ্রেফতার করে তিন মাস কারাগারে আটক রাখা হয়। জেল জুলুম নির্যাতনের পরও মিঠুন চাকমা দমে যাননি। তিনি আন্দোলন সংগ্রামে অবিচল ছিলেন।

নিপীড়ক রাষ্ট্র প্রতিবাদী কন্ঠকে রোধ করতে বিভিন্ন অপচেষ্ঠা চালাতে থাকে। ১৫ই নভেম্বর ২০১৭ সালে ‘নব্য মুখোশ বাহিনী’ গঠন হওয়ার পর ৫ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি বাজারের এক মারমা দোকান থেকে মিঠুন চাকমাকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। ব্যাপারটি আগেভাগে বুঝতে পেরে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে স্থান ত্যাগ করে চলে গেলে সন্ত্রাসীরা অপহরণে ব্যর্থ হয়। কিন্তু তবুও তাকে  অপহরণ ও হত্যার জন্য রা্ষ্ট্রযন্ত্রের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি।
৩রা জানুয়ারি ২০১৮ সালে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে মিঠুন চাকমাকে নিজ বাড়ির গেইট থেকে দিনে দুপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে অপহরণের পর প্রকাশ্যে শহরের রাস্তায় গুলি করে খুন করে। তাই এ হত্যাকান্ড সাধারণ কোন  হত্যাকান্ড নয়, এটা স্পষ্টতঃ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বর্বরোচিত রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড।
যারা মনে করে মিঠুন চাকমার মত সংগ্রামী ও মেধাবী সন্তানদের হত্যা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের মুক্তির লড়াইকে শেষ করে দেবে তারা দিবাস্বপ্নের জাল বুনছেন! তারা জানে না বিপ্লবী চেতনার মশাল কখনো নিভানো যায় না, নিভে যায় না। বরং সংগ্রামী শহীদের রক্তবীজ থেকে জন্ম নেয় শত বিপ্লবী। পাহাড়ের মুক্তির লড়াইয়ে মিঠুন চাকমাসহ অসংখ্য বিপ্লবী শহীদকে হারানোর শোক একদিন শক্তিতে পরিণত হবে। অমিত তেজে জ্বলে উঠে সংগ্রামী জনতা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিজয়ের নিশান উড়াবেই।

শহীদ মিঠুন চাকমা জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সাহসী ভূমিকার জন্য একজন প্রিয় সহযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক সংগ্রামী হিসেবে আমাদের মাঝে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মিঠুন চাকমা অমর হোক!
নিপীড়িত সংগ্রামী জনতার বিজয় অনিবার্য।


(বি:দ্র: লেখাটি মিঠুন চাকমার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত স্মরণসভায় পাঠকৃত লিখিত বক্তব্য।)