Back to the Hill ~পাহাড়ে ফিরে চলো

M.N LARMA,MITHUN CHAKMA LIVES,THE BATTLE CONTINUES...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

একটি বুলেট,একটি গভীর ক্ষত

0 comments
NOVEMBER 11, 2019 · 
সম্ভবত ২০০২-০৩ সালের দিকে আমার মেঝো কাকা রক্তক্ষয়ী সংঘাতে বলি হয়েছিলেন। তখন আমি ছোট,ভালো-মন্দ বুঝার বয়স হয়নি।তবুও অবচেতন মন হঠাৎ করে কোনো ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পুরনো সময়,স্মৃতিগুলো ঝাপটে ধরে।
তখন জানতাম না আমার কাকাকে কারা মেরেছে?কেনই বা মেরেছে?কাকা কি এমন ক্ষতি করেছে যে স্বজাতি ভাইদের হাতে জীবন দিতে হলো?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছু বিষয়ে আমি স্পষ্ট হই।
আমার কাকা ইউপিডিএফ রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।অসুখে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসে।এসময় জেএসএস সশস্ত্র শান্তিবাহিনীরা বাড়ি থেকে কাকাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।এরপর নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। আমার বাবা,দাদু,ছোট কাকা,মামা ও আত্নীয় স্বজনরা আপ্রাণ চেষ্টা করে ও কাকার মৃত লাশ ফেরত পায়নি।
আমার মা ও আত্নীয় স্বজনদের কাছে শুনেছি,বাড়ি থেকে অপহরণ করে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে কাকাকে প্রথমে পায়ে বুলেট বিদ্ধ করা হয়,এরপর বুলেটে বুক ঝাঁঝরা করে অর্ধমৃত অবস্থায় রাখা হয়।কাকা তখন নাকি স্বজাতি অস্ত্রধারী ভাইদের কাছে বাঁচার আকুতি মিনতি করছিলেন।কিন্তু আহত অবস্থায় কবর খুঁড়ে তাকেঁ জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হয়।
ছোটবেলায় আমি হয়তো খুব বেশি দুষ্টুমি করতাম।মায়ের কাছে প্রতিদিন ছোট বেত দিয়ে মার খেতাম।তখন পালিয়ে দাদির কোলে আশ্রয় নিতাম।মা আমাকে ছুঁতে ও পারতেন না।দাদি আমাদের ভালবাসতেন।প্রাইমারি স্কুলবেলায় বন্ধের সময় দাঁদির সাথে তাঁদের বাড়ি যেতাম।
চেঙ্গী নদী পার হয়ে পশ্চিম মৌনের পাদদেশে তখন তারাঁ নতুন ঘর বেঁধেছে।মাঝখানে বিশাল মাঠ পাড়ি দিতে হত।দাদির হাতের আঙুলে আঙুল রেখে আমি সে বিশাল মাঠ পাড়ি দিতাম।
মাঝপথে ক্লান্তি ঘিরে এলে দাদি একটু জিরিয়ে নিতেন।তাঁর দুচোখ তখন লাল হয়ে আসত।এরপর পানি গড়িয়ে পড়ত অঝোর ধারায়।আমি চুপ হয়ে যেতাম।কোনো শব্দ মুখ থেকে বের হত না।দাদি চিৎকার করে আমার কাকাকে ডাকতেন,হা-হুতাশ করে বাতাসে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন।বলতেন,ঐ অংগ্য বাবা,আমাকে রেখে কোথায় চলে গেলি?আমি নিরুপায় হয়ে,নিরুত্তর থাকতাম। এভাবে দিনের পর দিন দাদি কেঁদেছেন,১০ বছর ধরে দুচোখ প্লাবিত হয়েছে।
দাদি হয়তে মেঝ কাকাকে প্রচন্ড ভালবাসতেন।সংসারের ভরসার জায়গায় হয়তো কাকা ছিলেন। আমার বাবা সহজ-সরল মানুষ।কাজ ছাড়া তিনি কিছুই বুঝেন না।সেজন্য বাবা রাজনীতির ধারেকাছে ও যাননি। আমার কাকা সাহস নিয়ে সে পথে হেঁটেছেন,বাড়িতে লাশ হয়ে ও ফিরেননি।জাতির কাজ করতে গিয়ে গভীর জঙ্গলে তাকেঁ খুন করা হয়েছে।আমার পরিবার তাঁর লাশ ও ফেরত পায়নি। আমার মা এবং দাদি ১০-১৫ বছর পেরিয়ে আবার কান্না শুরু করে দিয়েছেন।কারণ আমি রাজনীতিতে জড়িত হয়েছি।দুবছর পেরিয়ে গেছে তারাঁ এখনো আমার মুখ দেখেননি।প্রতিদিন অনিশ্চয়তা,দুশ্চিন্তার মধ্যে তাঁদের সময় কাটছে।
যতটুকু স্মরণ করতে পারি,বাবার থেকে ও কাকাকে আমি বেশি ভালবাসতাম।যখন ছোট কাকা আমাদের বাড়িতে গেলে দুধের বিস্কুটের বড় প্যাকেট নিয়ে যেতেন। একদিন আমি অসুস্থ হয়েছিলাম।কাকা একটি বড় বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে আমাদের বাড়িতে হাজির।মায়ের উপর খুব রাগ হয়েছিল আমাকে খেতে দেননি।কারণ সে বিস্কুটগুলো খেলে আমার জ্বর আর ও বেড়ে যেত।কাকার কাঁধে চেপে এপাড়া-সেপাড়া করতাম।কাকা একদিন হারিয়ে গেল।আমরা তাকেঁ খুঁজে ও পেলাম না।মনের গভীরে ক্ষত তৈরি করে দিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।তথ্য নিয়েছি,আমার কাকার খুনী এখন বীরদর্পে সুবলঙ বাজার দখল করে আছেন।আর্মিদের হয়ে জাত ধ্বংসের পরিকল্পনায় এক বড় গুটি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।আমার মতন এরকম হাজারো গল্প জুম পাহাড়ে ছড়িয়ে আছে।কেউ আপন বাবা,ভাইকে হারিয়েছে অথবা মাকে হারিয়েছে।কেউবা এসময় বাবার জন্য প্রতীক্ষা করছে,কেউ স্বামীর জন্য,কেউ ভাইয়ের জন্য,কেউ আপন সঙ্গীর জন্যসর্বশেষ ২০১৩ সালের দিকে আমার পরিবার কাকার শেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে।আমার পরিবারের সদস্যরা খুণীদের অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছে।আমার ও কোনো আক্ষেপ নেই,প্রতিশোধ নেওয়ার ও মনোভাব নেই।সেজন্য আমি রাজনীতিতে ও আসেনি। তাঁরা ও এ সংঘাত চাই না।স্বজাতি রক্ষা করতে গিয়ে স্বজাতি ভাইদের হাতে মৃত্যু তারাঁ ও আর মানতে পারে না।এখন আমাকে নিয়ে তাঁদের গুরুত্বর আশঙ্খা হয়।প্রতিদিন বলে,তুমি ও কি তোমার কাকার পথে পা বাড়িয়েছো?প্রতিদিন মা দুঃস্বপ্ন দেখে আমাকে নিয়ে,আমাদের নিয়ে। আমি নিরুপায়,নিরুত্তর।তাঁদের জবাব দেওয়ার মত আমার কিছুই নেই। [সংঘাত বন্ধে এগিয়ে আসুন।নিজ নিজ জায়গা থেকে সমস্ত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিন। [ঐক্যেবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রামই বিজয়ের ভিত্তি রচনা করবে।]
দুটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি, চার্লস ডি মন্টেস্কু বলেছেন,"যদি কেউ সত্যিই মহৎ হতে চায়,তবে তাকে জনগনের সাথে এক কাতারে দাড়াঁতে হবে,ঊর্ধ্বে নয়।" শহীদ মিঠুন দা লিখেছিলেন,"If you see the other guy as a potential rival and deam him accordingly,you will turn a possible partner to a possible enemy." দৃষ্টিভঙ্গি বদলান,আমার চোখ দিয়ে আপনি আমাকে দেখুন আমি আপনার চোখ দিয়ে আপনাকে দেখব। এবং এই দেখাদেখি থেকে একটি নতুন পথ তৈরি হবে।এটা নিশ্চয়ই প্রমাণ হবে, "Solidarity makes us strong."